বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র। আর সে দেশের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থাটি ক্ষমতাশালী হবে না তা কি হয়! সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি- তবে বিশ্বজুড়ে এর পরিচিত নাম সিআইএ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে পরিচালনা করে আসছে দুর্ধর্ষ সব অভিযান।যা আলোচনায় ওঠে আসে আজও। এ রকম অভিযানের কথা জানাচ্ছেন- শামছুল হক রাসেল ও তানভীর আহমেদ-
পিগস ইনভেশন বা জ্যাপাট
অপারেশন জ্যাপাটা নামে অধিক পরিচিত সিআইএ অপারেশন দ্য বে অব পিগস ইনভেশন। সিআইএ গোয়েন্দা হামলার তালিকায় বরাবরই শীর্ষস্থানে অবস্থান করে এই অপারেশন। শুধু সিআইএ নয়, বরং সারা দুনিয়ার ইতিহাসের সেরা গোয়েন্দা হামলার একটি এই অপারেশন জ্যাপাট। অপারেশন জ্যাপাট যে শুধু সিআইএ’র জন্য একটি দুর্ধর্ষ অভিযান ছিল তা নয়, গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে সিআইএ কতটা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে সেটার একটি চ্যালেঞ্জ সামনে এসে দাঁড়ায়। ১৯৬১ সালে কিউবায় প্রায় এক হাজার ৫০০ অত্যন্ত দক্ষ সিআইএ সেনা এই অপারেশনে অংশ নিয়েছিল। পিগস ইনভেশন নামটি দেওয়া হয় গোয়েন্দা হামলার মারাত্দক ব্যর্থতার জন্য। এই অপারেশনে সংগঠনটির কয়েক হাজার সেনা কিউবার সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে এবং তাদের নৃশংসভাবে জবাই করে হত্যা করা হয়। ফিদেল ক্যাস্ট্রোকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য সিআইএ এই গোয়েন্দা হামলার নীলনকশা করেছিল। বাইরে থেকে পরিকল্পনার সব ঠিক দেখালেও কিউবায় হামলা করতে নেমে পরিস্থিতি একেবারেই সিআইএ’র প্রতিকূলে চলে যায়। একে তো ক্যাস্ট্রোর ব্রিগেড সিআইএ’র হামলা সম্পর্কে আগেই জেনে ফেলেছিল এবং ক্যাস্ট্রোর সেনা ব্রিগেডের বিছানো ফাঁদেই সিআইএ পা ফেলেছিল। সব মিলিয়ে সিআইএ’র অপারেশন জ্যাপাটা ছিল একটা লম্বা দুঃস্বপ্ন। বোদ্ধারা বলেন, সেই অপারেশনের ক্ষয়ক্ষতি আজও পুষিয়ে উঠতে পারেনি তারা। এক হাজার ৫০০ জনের সিআইএ’র প্রশিক্ষিত বাহিনী কিউবার উপকূলে নামমাত্র হামলা করতে পেরেছিল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কিউবার সেনা ব্রিগেড তাদের ঘিরে ধরে এবং আটকে ফেলে। তথ্যগত কোনো ত্রুটি যতটা না ছিল তার চেয়ে বেশি ছিল প্রতিপক্ষের সামর্থ্য মোকাবিলায় নিজেদেরে দুর্বলতা। তবে সিআইএ ছেড়ে কথা বলেনি। কিউবা সীমান্তে প্রতিরোধ গড়ে তোলে কিউবা ব্রিগেড। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর সিআইএ বাহিনী ধরা পড়ে গেলে পুরো যুদ্ধের ময়দানে আলোচিত হয় সিআইএ’র সামর্থ্য নিয়ে।
অথচ পরে জানা যায়, সিআইএ’র আমেরিকান সেনা ছিল ২০০ জনের মতো। সামান্য এক তরফা লড়াইয়ের পর কিউবার
ব্রিগেডের কাছে হাজারখানেক সিআইএ এজেন্ট ও যোদ্ধা জবাই হয়ে যায়। এত বড় আকারের অপারেশনে সিআইএ’র এই হতাশাজনক পরিণতি ঘটলেও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ইতিহাসে এই হামলা একটি অন্যন্য ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
অপারেশন গোল্ড
ফোনকলে আড়িপাতার চর্চা অনেক আগেই শুরু হয়েছিল। তবে এর গোড়াপত্তন হয় রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শীতল টানাপড়েনের পরই। রাশিয়া যখন বার্লিনে তাদের যুদ্ধকৌশল বিস্তারের জন্য ফোনকল নির্ভর হয়ে পড়ে তখনই তথ্যচুরির জন্য সিআইএ ফোনকলে আড়িপাতার ধারণাটির জন্ম দেয়। শুরু হয় বিশাল আকারের ফোনকল চুরির ঘটনা। সিআইএ খুব গোপনে এই মাস্টার প্ল্যানটি দাঁড় করায়। অপারেশন গোল্ড নামটা শুনে অনেকেরই মনে হতে পারে স্বর্ণ উদ্ধার বা স্বর্ণ নিয়ে কিছু একটা হবে। আসলে এই অভিযানে স্বর্ণ নিয়ে কোনো হানাহানি নয়, তবে সিআইএ’র স্বর্ণোজ্জ্বল একটি অভিযান ছিল এই অপারেশন গোল্ড। ব্রিটিশ সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস ১৯৫৩ সালে রাশিয়ার সঙ্গে শীতল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। সে সময় ইন্টেলিজেন্স টিম এম-১৬ নিয়ে কাজ করে। শুরুতেই রাশিয়ার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ফোনকলে আড়িপাতে। ফোনকলে আড়িপাতার এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সিআইএ দুর্ধর্ষ একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে। রাশিয়ার সামরিক শক্তির নিরাপত্তা বলয়ে ঢাকা পূর্ব বার্লিনে সিআইএ ঢুকে পড়ে। পূর্ব বার্লিনে সবচেয়ে ব্যস্ততম সড়কের নিচ দিয়ে চলে গেছে টেলিফোনের তার। রাস্তার নিচে প্রায় ১,৪৬৭ ফুট লম্বা টানেল ধরে এগিয়ে যায় ইন্টেলিজেন্স টিম এবং প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি সংযুক্ত করে টেলিফোনের তারে। ১৯৫৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে পুরো কাজটি শেষ হতে সময় নেয় ১৯৫৫ সালে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ফোনকলে আড়িপাতার ঘটনা কতটা ভয়াবহ ছিল সেটা একটা ছোট উপাত্ত দিয়ে অনুমান করা যায়_ মাত্র এক বছরেই রাশিয়ার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের পাঁচ লাখ ফোনকলে আড়িপাতে সিআইএ! আশ্চর্যের এখানেই শেষ নয়, সিআইএ পুরো ব্যাপারটা এতটাই গোপনে ও সফলভাবে করে যে, ব্রিটিশসহ অন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এর খোঁজ পর্যন্ত পায়নি। তবে রাশিয়া কৌশলগত কারণেই পূর্ব বার্লিনে মূল-পরিকল্পনার খুব সামান্যই আদান-প্রদান করত। তাই দেরিতে হলেও ফোনকলে আড়িপাতার বিষয়টি যখন টের পায়, তখন খুব একটা আগ্রাসী মনোভাব দেখায়নি রাশিয়া। সিআইএ’র বিরুদ্ধে পাল্টা হামলায় যায়নি তারা। তবে পৃথিবী প্রথমবারের মতো জানতে পারে ফোনকলে আড়িপাতায় সিআইএ’র এ মারাত্দক দক্ষতার কথা.
প্রজেক্ট পিজিয়ন
ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে দেখা যায় যে, গোয়েন্দা কাজে পায়রা বা কবুতরকে ব্যবহার করতেন রাজা-বাদশারা। আর সেই ধারণাকে সিআইএ আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায় তাদের প্রজেক্ট পিজিয়ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সংকটময় পরিস্থিতিতে পৃথিবীর গোয়েন্দা সংস্থার ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত ভূমিকায় আসে সিআইএ। বিশেষ করে সিআইএ’র বিশেষ শাখায় বি এফ স্কিনার পদাষিক্ত হয়েই একটা গুরুত্বপূর্ণ নিরীক্ষা চালায়। পরীক্ষাটিতে বেরিয়ে আসে পশুরা পুরস্কার অথবা আঘাতে ঠিক কেমন পরিস্থিতিতে কেমন আচরণ করে। আর এই পরীক্ষার ফলেই যুগান্তকারী একটি আবিষ্কার হয় এবং একই সঙ্গে একদম নতুন একটি শক্তি হাতে আসে সিআইএর। যুদ্ধে কবুতরকে ট্রেনিং দিয়ে মিসাইলের দিক নির্ণয় ও সফলভাবে ছোড়ার একটি পদ্ধতি কাজে লাগায়। পুরোপুরি অবিশ্বাস্য শোনালেও নথিপত্র প্রমাণ দেয়, অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বেশ কয়েকটি মিসাইলের গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করেছিল কয়েকটি পোষা ও ট্রেনিংপ্রাপ্ত কবুতর। মিসাইলের ফ্লাইট রুটে কবুতর একদম ঠিকঠাক পথ-নির্দেশ করেছিল। তবে ২৫ লাখ ডলারের এই পরীক্ষা শেষে বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। মিসাইলের মতো বিধ্বংসী মারণাস্ত্র নিয়ে কোনো ধরনের সংশয় নিয়ে কাজে নামা মোটেই সমীচীন হবে না বলে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিআইএ’র এই প্রজেক্ট ও অপারেশন এতটাই ব্যতিক্রমী ছিল যে, আজও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন কবুতর দিয়ে মিসাইল হামলা চালনার সম্ভাবনা মোটেই উড়িয়ে দেয় .
একুয়েস্টিক কিটি
সিআইএ’র উদ্ভাবনী দক্ষতা নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ নেই। একেবারেই সন্দেহের বাইরে, ধারণার বাইরে যত ভাবে সম্ভব গোয়েন্দা কাজ চালানোর বিষয়গুলোতে তারা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে গবেষণা চালায়। ফলাফল হিসেবে নিয়ে আসে কাজের সফলতা। বিড়াল পাঠিয়ে রাশিয়ান অ্যাম্বাসির ভেতরে খবর হাতিয়ে নেওয়ার একটি অপারেশন চালিয়েছিল সিআইএ। ২০ মিলিয়ন ডলারের এই অপারেশনে পাঠানো বিড়ালটিকে কিটি বলে ডাকা হতো। যদিও বেশ কয়েকটি বিড়ালকেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। বিড়ালগুলোর দেহে কৌশলে মাইক্রোফোন, অ্যান্টেনা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিড়ালের কানে, নাকে, লেজে ছিল যোগাযোগের আধুনিক সব প্রযুক্তি। ভীষণ হতাশার বিষয়, সিআইএ’র সবচেয়ে দক্ষ বিড়ালটি রাশিয়ান অ্যাম্বাসির ভেতর যাওয়ার আগেই গাড়িচাপা পড়ে প্রাণ হারায়। রাশিয়ান অ্যাম্বাসি বিড়ালটিকে পরীক্ষা করে সিআইএ’র ‘একুয়েস্টিক কিটি’ সম্পর্কে জেনে যায়। ব্যর্থ হয়ে যায় অপারেশন একুয়েস্টিক কিটি। তবে ব্যর্থতা স্বীকার করলেও কেউ জানে না প্রশিক্ষিত অন্য বিড়ালগুলোর কি হয়েছিল। গুজব আছে সেই বিড়াল দিয়ে গোয়েন্দাগিরির আরও উন্নত কোনো কৌশল তাদের হাতে ইতোমধ্যেই এসে গেছে।
মিডনাইট ক্লাইমেক্স
মানুষের মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার একটি পরিকল্পনা নিয়ে সিআইএ কাজ করেছিল। সম্ভাবনার হার যতই হোক, সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য সিআইএ বসে থাকেনি কোনোকালেই। বিশ্বসেরা এই গোয়েন্দা সংস্থা মানুষের মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ নিতে এলএসডির মতো উত্তেজক ড্রাগস ব্যবহার করে। গবেষণায় বেরিয়ে আসে, এলএসডির মতো উত্তেজক ড্রাগস দিয়ে ইচ্ছা করলেই মানুষের মাথার নিয়ন্ত্রণ সাময়িকভাবে নেওয়া সম্ভব। এমনকি সেঙ্চ্যুয়াল ব্ল্যাকমেইলিং করার জন্য সিআইএ’র গবেষণাগারে সফলতা পেতে গোয়েন্দা কাজে এলএসডি ড্রাগস হয়ে ওঠে সংস্থাটির তুরুপের তাস। যে এলএসডি ড্রাগসটি নিয়ে সিআইএ কাজ করছিল সেটা এমনিতেই যথেষ্ট উত্তেজক ড্রাগস ছিল। সেটার প্রভাব পরবর্তীতে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে সেটা বিবেচনা না করেই সিআইএ তার গবেষণা চালিয়ে যায়। অনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতেই মানুষের মস্তিষ্ক কব্জা করে নিতে এলএসডির ব্যবহার নিয়ে হঠাৎ একজন সিআইএ ইন্সপেক্টর নতুন করে ভাবতে শুরু করে। ১৯৬৩ সালে অপারেশন মিডনাইটের মতোই এলএসডি ড্রাগস দিয়ে মানুষের মাথার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার একটা গবেষণা হয়েছিল এবং তার ফলাফল খুব একটা আশাব্যঞ্জক ছিল না। সিআইএ জেনারেল আবারও গবেষণা চালিয়ে যেতে বললে শীঘ্রই এলএসডি উত্তেজক ড্রাগস দিয়ে মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণের একটি ত্রুটি ধরা পড়ে। কিছু ক্ষেত্রে এলএসডি দিয়ে মোহগ্রস্ত সাবজেক্ট শত্রুপক্ষকে হামলার পরিবর্তে উল্টো প্রশিক্ষণ কর্মীদের হামলা করে বসে। মাথার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যর্থ হয়ে সিআইএ অপারেশন মিডনাইট বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এই প্রজেক্ট থেকে যায় দুনিয়ার গোয়েন্দা সংস্থাদের ভাবনার খোরাক হিসেবে।
দ্য স্টারগেট প্রজেক্ট
ভবিষ্যৎকে বিশ্লেষণ করার অনন্য ক্ষমতা নিয়ে শুরু হয়েছিল দ্য স্টারগেট প্রজেক্ট। এক কথায় বলতে গেলে মানুষের মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণের জন্যই এ প্রজেক্ট শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্র সরকার সিআইএকে দিয়ে করানো সবচেয়ে বড় আকারের প্রজেক্ট হিসেবে কুখ্যাতি পেয়েছিল এই স্টারগেট। মেধাবী সাইকিক তথা মনোবিজ্ঞানীদের হাত করেছিল সিআইএ। তাদের সংখ্যা ঠিক কত ছিল গোপনীয়তা ভেঙে সেটা আজও কেউ বের করতে পারেনি। তবে তাদের পেছনে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ঢালা হয়েছিল। বিজ্ঞান স্বীকৃতি দেয়, অসাধারণ মেধাবীদের যে কোনো পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে অন্য সাধারণের চেয়ে শতকরা ১৫ ভাগ বেশি সঠিক তথ্য বা ভবিষ্যৎ ফলাফল বলে দিতে পারে। আর সাইকিক দিয়ে ঠিক এটাই বের করে আনতে চেয়েছিল সিআইএ। তারপর মাস্টার প্ল্যানটা খুব সহজ। একটি হামলার পর প্রতিপক্ষ ঠিক কি জবাব দেবে সেটা আগেই জেনে ফেলা। ব্যস, তারপর তো পুরোটাই নিয়ন্ত্রণে। গোপন নথিপত্র ঘেঁটে শত্রুদের পরিকল্পনা জেনে ফেলার চেয়েও এটা জেনে ফেলা কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তা নিশ্চয়ই অনুমেয়। তবে সিআইএ দ্য স্টারগেট প্রজেক্টে হয়তো বা সফলতা পায়নি বলেই অনেকের ধারণা। অসংখ্য সাইকিকের গোপনীয়তা ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায় প্রজেক্টটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অবশ্য এখনো অনেকে বিশ্বাস করে, সিআইএ প্রজেক্টটি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
অপারেশন নর্থউডস১৯৬০ সালে সিআইএ’র সামনে একটি চ্যালেঞ্জ এসে দাঁড়ায়_ কিউবার ভিত্তি বলে পরিচিত ফিদেল ক্যাস্ট্রোকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। সিআইএ সবচেয়ে সহজ পথটি খুঁজে পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে। শেষে সিআইএ যে পরিকল্পনা কষে সেটা শুনে অাঁতকে ওঠে অনেকেই। কিন্তু পুরো মাস্টার প্ল্যান নিয়ে সিআইএ গুছগাছ শুরু করে। পরিকল্পনাটা ছিল আমেরিকানদের দিয়ে ইউএসের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাকে হত্যা করা হবে। হত্যা পরিকল্পনার মূলে থাকবে, আমেরিকায় সন্ত্রাস আর খুনের একটা মারাত্দক ছকে বিস্তার করা এবং এই অস্থিরতার দায়ভার দেওয়া হবে কিউবার শক্তিমান ফিদের ক্যাস্ট্রোর ওপর। সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ তুলে পুরো বিশ্বের মনোযোগ কেড়ে নিয়ে কিউবায় সামরিক হামলা এবং ফিদেল ক্যাস্ট্রোর পতন নিশ্চিত করা। এ ভয়াবহ মাস্টার প্ল্যান শুধু জন এফ কেনেডির সম্মতির অভাবে বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু তার মৃত্যুর পর সিআইএ’র এই মাস্টার প্ল্যান গোপন থলে থেকে বেরিয়ে আসে। বোদ্ধারা বলেন, অপারেশন নর্থউডস বাস্তবায়ন না হলেও এই মাস্টার প্ল্যান এখনো নানা দেশে নানাভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। নিজ দেশে সন্ত্রাসী হামলায় অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী দেশকে অভিযুক্ত করে শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে সামরিক হামলা চলছে। সিআইএ’র এই মাস্টার প্ল্যান সর্বকালের সবচেয়ে নগ্ন গোয়েন্দা কৌশল হিসেবে বিবেচিত।
অপারেশন ফোনিক্স
প্রেসিডেন্ট কেনেডি নিহত হওয়ার পর ভিয়েতনামে মার্কিন অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। তখন এ একটি হত্যা আরও হাজার হাজার মানুষ হত্যার উপলক্ষ হয়ে সামনে চলে আসে। বিশেষ করে প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর বদলা নিতে সিআইএ তার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে উঠেপড়ে লেগে যায়। আর সেই লক্ষ্যে ১৯৬৪ সালে সিআইএ’র পরিকল্পনায় টংকিং উপসাগরের তীরবর্তী এলাকায় উত্তর ভিয়েতনামি সৈন্যদের ছদ্মবেশে অবস্থান নেয় মার্কিন বাহিনী। আর মার্কিন মার্সেনারিদের হামলায় ১০ হাজার দক্ষিণ ভিয়েতনামি নিহত হন। এর পেছনে ছিল আরেক রহস্য। এ হামলার দোহাই দিয়ে আমেরিকা উত্তর ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। একই সঙ্গে পূর্ণতা পায় অপারেশন ফোনিঙ্। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে সিআইএ খুন করে ৩০ হাজারের বেশি উত্তর ভিয়েতনামি রাজনীতিবিদ। এটি ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ ও জঘন্য গণহত্যা হিসেবে কুখ্যাত। সিআইএ এত বড় আকারে কোনো অভিযান কমই করেছে। আর তাদের পরিচালিত যে কোনো অভিযানে এত মানুষ হত্যা করার নজিরও নেই.
এক নজরে.প্রতিষ্ঠাকাল : ১৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭।[ অনির্ধারিত কাজ ১৯৪৭-এর আগে থেকেই ]সংস্থার ধরন : স্বাধীন গোয়েন্দা সংস্থা।পূর্বসূরি : অফিস অব স্ট্র্যাটেজিক সার্ভিসেস [ওএসএস]উত্তরসূরি সংস্থা : সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ।সদর দফতর : জর্জ বুশ সেন্ট্রাল ফর ইন্টেলিজেন্স, ভার্জিনিয়া।কর্মী সংখ্যা : গোপনীয়।আনুমানিক : ২০,০০০বার্ষিক বাজেট : ৪৫ বিলিয়ন, ঘোষিত।জবাবদিহিতা : কংগ্রেসনাল অ্যাফেয়ার্স অফিস,হোয়াইট হাউস, [মার্কিন প্রেসিডেন্ট]।
যেভাবে সংগৃহীত হয় তথ্য* সরাসরি নিজস্ব গোয়েন্দা বা এজেন্টের মাধ্যমে।
* সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার।
* গোয়েন্দা তথ্য আউটসোর্সিং করা।
* এনজিও বা বেসরকারি সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করা।
* সিআইএ’র তথ্য সংগ্রহের বড় একটি মাধ্যম হচ্ছে মিডিয়া বা সংবাদমাধ্যম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকা, টিভি
চ্যানেল, সরকারি প্রকাশনা, পরিসংখ্যান, সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের বক্তৃতা-বিবৃতি থেকে তারা তথ্য সংগ্রহ করে।
* নানাভাবে বিশ্বজুড়ে ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন
প্রতিষ্ঠানকে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে কাজে লাগানো।
* বড় বড় সেনা কর্মকর্তাকে অস্ত্র ব্যবসার ফাঁদে ফেলে তাকে কাজে লাগিয়ে তথ্য উদ্ধার।
* রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ও নীতিনির্ধারক লোকদের অর্থবিত্তের
মাধ্যমে কিনে নেওয়া।
* ফ্যামিলি ট্রি ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ।
* সমমনা রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে আঁতাত।-