রোজা নিয়ে সোজা কথা

শামসুল হক রাসেল | ১২ জুন ২০১৫ | পড়া হয়েছে 1012 বার

রোজায় ভাজাপোড়া খাবার প্রায় সবারই প্রিয় কিন্তু এই ভাজাপোড়া জাতীয় ইফতারি গ্রহণের ফলেই অনেক রোজাদার শারীরিক অস্বস্তিতে ভোগেন বলে উল্লেখ করেছে ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব রমাদান ফাস্টিং রিসার্চ’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণালব্ধ নিবন্ধে। নিবন্ধে বলা হয়েছে, ভাজাপোড়া খাবার, অতিমসলাযুক্ত খাবার এবং অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার গ্রহণের কারণে অনেকেই রোজা রেখে অবশেষে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে রোজার পর এদের অধিকাংশই ক্রমান্বয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন। হঠাৎ করে একসঙ্গে এসব খাবার গ্রহণের ফলে বদহজম, বুকজ্বলা এবং ওজন বৃদ্ধির সমস্যা দেখা দেয়। রোজা রাখার সময় যাতে এসিডিটি দেখা না দেয় তা প্রতিরোধের জন্য অাঁশযুক্ত খাবার, শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এই জাতীয় খাবার পাকস্থলির মাংসপেশির সংকোচন প্রসারণ প্রক্রিয়া বাড়িয়ে দিয়ে পেটফাঁপা যেমন প্রতিরোধ করে তেমনি খাবারগুলোকে ভেঙে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশে পরিণত করে। ফলে খাবার সহজেই হজম হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে এসিডিটি দেখা দেওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়।

উল্লেখ্য, রোজায় বাজারে তৈরি ভাজাপোড়া খাবারের অধিকাংশই ভাজা হয় পুরনো তেল দিয়ে। একই তেলে বারবার ভাজা খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। একই তেলে বারবার ভাজার ফলে তাতে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের সৃষ্টি হয়। এসব রাসায়নিক পদার্থ ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থ হিসেবে পরিচিত। একইভাবে ক্যান্সারের উদ্রেককারী আরেকটি উপাদান হচ্ছে রঙিন শরবতে ব্যবহৃত কৃত্রিম রং। সেহেরির পর অনেকেই চা পান করে থাকেন। চা অনেক উপকারী এ কথাও প্রায় সবার জানা কিন্তু এই নিবন্ধে গবেষকরা সেহেরির পর চা পান থেকে বিরত থাকতে বলেছেন একটি ভিন্ন কারণে।

গবেষকরা বলছেন চায়ের মধ্যে রয়েছে ক্যাফেইন। এই ক্যাফেইন প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে শরীরে পানিস্বল্পতা দেখা দিয়ে থাকে। রোজার ব্যাপারে অনেকেই অজুহাত খোঁজেন। বিশেষ করে কেউ যদি সামান্য অসুস্থ থাকেন তাহলে তিনি রোজ না রাখার পেছনে সেই অজুহাতকেই হাতে তুলে নেন। অথচ সত্যি কথা হচ্ছে, সামান্য অসুস্থতা তো দূরে থাক, অনেক ক্রনিক রোগ অর্থাৎ দীর্ঘস্থায়ী নিয়ন্ত্রণযোগ্য বিভিন্ন রোগেও রোজা রাখার ব্যাপারে কোনো নিষেধ নেই। বরং বিভিন্ন রোগে রোজা রাখার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে। আর সুস্থ অবস্থায় রোজা রাখা যে শরীরের জন্য উপকারী সে কথা এখন প্রায় সবারই জানা।

রোজার সঙ্গে যেহেতু না খেয়ে থাকার একটা সম্পর্ক রয়েছে, তাই পেপটিক আলসার কিংবা বদহজম ও বুকজ্বলার সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের অনেকেই বলে থাকেন রোজা রাখলে এ সমস্যা বেড়ে যাবে। আর এ কারণে তারা রোজা রাখেন না। আসলে এ ধারণা কিন্তু একদম সত্যি নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ জাতীয় সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য রোজা রাখা ভালো। ডায়াবেটিস রোগীদের অনেকেই রোজা না রাখার পেছনে এই রোগটিকে দায়ী করে থাকেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে রোজা রাখতে কোনো নিষেধ নেই। মোটামুটিভাবে নিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে খুব সহজেই রোজা রাখা সম্ভব। তবে রোজা রাখার জন্য ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ইনসুলিন কিংবা কোনো ওষুধ গ্রহণের সময়টাকে একটু পরিবর্তন করে সেহেরি ও ইফতারের সঙ্গে সমন্বয় করে নিতে হবে। এ ব্যাপারে একজন হরমোন বিশেষজ্ঞ কিংবা মেডিসিন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।

মন্তব্য করতে পারেন এখানে...

আরও লেখা

সব লেখা