অফিস পলিটিক্স এবং আপনি…

শামসুল হক রাসেল | ১২ জুন ২০১৫ | পড়া হয়েছে 1212 বার

যার আভিধানিক অর্থ হলো রাজনীতি। একটা সময় পলিটিক্স বলতে মানুষ ভিলেজ পলিটিক্সকেই বুঝত। সঙ্গে সঙ্গে বুঝত এর খারাপ ও ভয়াবহ পরিণামটাও। এটি এখন আর নির্দিষ্ট জায়গায় সীমাবদ্ধ নেই। ভিলেজ পেরিয়ে শহরের পাড়া-মহল্লা এমনকি কর্পোরেট অফিসগুলোতেও ঢুকে পড়েছে এই পলিটিক্স। বর্তমানে পলিটিক্সকে সবাই আড়চোখে দেখে। এমনকি লোকমুখে শোনা যায়, রাজনীতির মধ্যেও পলিটিক্স ঢুকে পড়েছে। ক্যারিয়ারের জন্য অফিস পলিটিক্স হুমকিস্বরূপ। কর্পোরেট জগতে একে অন্যকে ঘায়েল করতে ব্যবহার করে  কর্পোরেট পলিটিক্স।কি করবেন : অফিসের সবার সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখুন। কারো সঙ্গে ইচ্ছাকৃত খারাপ ব্যবহার করবেন না। কারণ খারাপ ব্যবহার থেকেই সৃষ্টি হয় প্রতিপক্ষ। * উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করুন। যেকোনো সমস্যা সরাসরি বলুন। সহকর্মীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি বা মনোমালিন্য হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বসতে জানিয়ে রাখুন। ফলে এ বিষয়ে আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও পরবর্তীতে আপনার জন্য সহায়ক হবে। * অধীনস্থদের সুযোগ-সুবিধা জানতে চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে তাদের কোনো দাবি কর্তৃপক্ষের সামনে পেশ করুন। এতে করে বস এবং আপনার অধীনস্থদের মাঝখানে আপনার ভূমিকা জোরালো হবে। * অফিসে সবসময় সময় মতো আসার চেষ্টা করুন। ফলে প্রতিপক্ষ আপনার বিরুদ্ধে প্রশাসনের কারো কাছে অভিযোগ দায়ের করতে পারবে না। * জরুরি কাজ থাকলে আগেই সেরে ফেলুন। ছুটির প্রয়োজন হলে সহকর্মীদের শেয়ার করুন। প্রয়োজনে বসকে জানান। এতে করে সহকর্মীর মনে আপনার জন্য আলাদা কদর বাড়বে। চেষ্টা করবেন অন্যের প্রয়োজনে নিজের ডে-অফকে বাদ দিয়ে কর্মক্ষেত্রে আসতে। ফলে আপনার প্রতি সবার আলাদা দৃষ্টি থাকবে। আপনার বিরুদ্ধে যেকোনো খারাপ সিদ্ধান্ত নিতে গেলে এসব কাজ ঢাল হিসেবে ব্যবহার হবে। * মিটিংয়ের জরুরি ফাইল নখদর্পণে রাখুন। প্রয়োজনে কোনো সেফটি লকারে রেখে যান। প্রতিপক্ষ চাইবে আপনার ক্ষতি করতে। হয়ত জরুরি ফাইলটি গায়েব করে ফেলতে পারে। এতে করে কর্তৃপক্ষের কাছে আপনাকে জবাবদিহি করতে হতে পারে। এমনকি চাকরি হারানোর আশঙ্কাও থাকতে পারে। * প্রতিটি কর্পোরেট হাউসে বিভিন্ন গ্রুপিং থাকে। সবাই চেষ্টা করবে নিজ নিজ গ্রুপে কাছে টানতে। এসব এড়িয়ে চলাই ভালো। সবচেয়ে ভালো নিরপেক্ষভাবে কাজ করে যাওয়া। কাজের জন্য এসেছেন। আসেননি কোনো গ্রুপিং বা অফিস পলিটিক্স করতে। মনে রাখবেন আপনি যদি কারো বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন তাহলে আপনাকেও একদিন এর শিকার হতে হবে। * অফিসের স্পর্শকাতর ফাইল ও গোপনীয় বিষয়ে কখনো অন্যের সঙ্গে আলোচনা না করাই ভালো। এসব বিষয় সবসময় এড়িয়ে চলবেন। * যদি কখনো কোনো আড্ডাতে কোনো পরচর্চা শুনতে পান তাহলে সেখানে উস্কানিমূলক কোনো কথা বলা ঠিক নয়। পরবর্তীতে সেসব সহকর্মীই এসব বক্তব্যের জন্য আপনার প্রতি আঙ্গুল তুলবে। এমনকি ছড়িয়ে দিতে পারে যে, আপনি এসব কথার উদ্ভাবক। * কাজ করার সময় বসের ডাক পড়লে অবশ্যই পাশের সহকর্মীকে আপনার টেবিলের দিকে নজর রাখতে বলবেন। কারণ আপনার অনুপস্থিতিতে প্রতিপক্ষ চাইবে কাজের ব্যাঘাত ঘটাতে। হতে পারে তারা কোনো ফাইল মিসিং করতে পারে আপনার কম্পিউটার থেকে। * সহকর্মী থেকে টাকা ধার নিতে হলে অবশ্যই আরেকজন সহকর্মীকে জানিয়ে রাখা ভালো। কারণ ভবিষ্যতে টাকার পরিমাণ বাড়িয়ে বলে আপনাকে অফিসে সবার সামনে বিব্রত করতে পারে। মনে রাখবেন এরকম ঘটনা থেকেই জড়িয়ে যেতে পারেন অফিস পলিটিক্সের মতো ঘৃণ্য ব্যাপারে। * সহকর্মীকে কোনো ফাইল, চিঠি, ডকুমেন্টস দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রহণ কপি হিসেবে স্বাক্ষর করিয়ে রাখবেন। ভবিষ্যতে অস্বীকার করলে এটি আপনাকে বাঁচাবে।

কি করবেন না

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কখনো তোষামোদ করবেন না। মনে রাখবেন তোষামোদকারীরা কখনো তাদের আগের অবস্থানে ফিরে আসতে পারে না। তখন তাদেরকে তোষামোদ করেই চলতে হয়। * অনেক সময় একারণে সহকর্মীরা আপনাকে ঈর্ষা করতে পারে। তা থেকেই লিপ্ত হতে পারে আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে। * পরচর্চা পরনিন্দা থেকে বিরত থাকা উচিত। এসব শত্রু বাড়াবে। দিন যত যাবে ওদের সঙ্গে প্রতিযোগিতাও বেড়ে যাবে। জড়িয়ে যেতে পারেন বিভিন্ন মানসিক চাপে ও অফিসিয়াল ব্যস্ততায়। এসব ঝামেলা তখন বাড়বে যখন আপনার প্রতিপক্ষ সৃষ্টি হবে। তাই পরচর্চা করে প্রতিপক্ষ বাড়াবেন না। * আপনি যদি প্রশাসনিক দফতরের অফিসার হন তাহলে ভুলেও ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন না। আপনার ভুলে যাওয়া চলবে না। আপনিও সবার মতো চাকরি করতে আসছেন। আর যদি ক্ষমতার অপপ্রয়োগে কারো ক্ষতি করেন তাহলে আপনাকেও একদিন এরকম অবস্থার মুখোমুখি হতে হবে। * অফিস ত্যাগ করার সময় অবশ্যই কম্পিউটার অফ করতে ভুলবেন না। কারণ পরক্ষণেই আপনার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ চলে যেতে পারে। দেখাতে পারে আপনার অবহেলা। এসব ছোট খাটো বিষয় থেকেই সৃষ্টি হতে পারে আপনার বিরুদ্ধে অফিস পলিটিক্স নামক কালো ছোবল। * যথাসম্ভব অতিথি এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজনে তাদের বাইরে সময় দেন। কারণ যে কেউ বলে উঠতে পারে আপনার অতিথি বেশি আসে। কাজের ব্যাঘাত ঘটে। পরবর্তীতে এ বিষয় নিয়ে অভিযোগ উঠবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে। * বেতন বৈষম্য নিয়ে কখনো সবার সামনে উচ্চবাচ্য করবেন না। প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলুন। আপনার এসব উচ্চবাচ্য আপনার ক্যারিয়ারের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। আপনার অজান্তেই নামের আগে পড়ে যেতে পারে বিদ্রোহী টাইটেলটি। ফলে যা হবার তাই হবে। অর্থাত্ অফিস পলিটিক্সের স্বীকার হয়ে চাকরিটি হারাতে পারেন।প্রত্যেকেই চায় জীবনে সফলতা পেতে। বেঁচে থাকতে চায় প্রতিযোগিতার এই বাজারে। সেখান থেকেই গড়ে উঠে ঈর্ষা। আর ঈর্ষা থেকেই চলে আসে অফিস পলেটিক্স। তাই সবার উচিত অন্যের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত না হয়ে তাকে উত্সাহিত করা এবং মিলেমিশে কাজ করা। তাহলেই আমরা বাঁচতে পারব এই অফিস পলিটিক্স নামক সাপের ছোবল থেকে।

মন্তব্য করতে পারেন এখানে...

আরও লেখা

সব লেখা